news2bdgazette@gmail.com সোমবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৪, ১৬ই বৈশাখ ১৪৩১

বায়ু শোধনে সবচেয়ে কার্যকর বটগাছ

পরিবেশ ডেস্ক

প্রকাশিত:
২২ ডিসেম্বার ২০২৩, ০৮:১৪

ফাইল ছবি

বায়ুদূষণ ও বাতাসে ক্ষতিকর ধাতুর কারণে রাজধানী ঢাকা প্রায়ই দূষিত শহরের শীর্ষে অবস্থান করে। আর এ দূষণ থেকে বাঁচার জন্য তেমন কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ দেখা যায় না। প্রাকৃতিকভাবে একমাত্র গাছই আমাদের পরিবেশে ভারসাম্য রক্ষা করে। খবর ইত্তেফাক

এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক তথ্য দিলেন, রাজধানীতে বায়ু পরিশোধনের সহজ সমাধান হতে পারে বটগাছ। যেটি বড় ও ঘন পাতার সাহায্যে বাতাসে ভেসে বেড়ানো ভারী ধাতু সহজেই ধরে রাখতে পারে। দূষণ পরিশোধনেও সবচেয়ে এগিয়ে। তবে রাজধানীতে দিনদিনই কমছে এ আদি বৃক্ষের সংখ্যা। বর্তমানে কতটি গাছ রয়েছে সে বিষয়ে জানে না কোনো সংস্থাই।

ঢাকার ক্রমবর্ধমান বায়ুদূষণে উদ্ভিদের টিকে থাকার ওপর একটি গবেষণা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে সিসা, ক্রোমিয়াম, নিকেল ও ক্যাডমিয়ামের উপস্থিতি অনেক বেশি। এসব ভারী ধাতু শোষণ ও পরিশোধনে গাছের সক্ষমতার বিষয়টিও গবেষণায় উঠে এসেছে। চারটি ভিন্ন জায়গা থেকে চারটি গাছের নমুনা নিয়ে গবেষকরা এ পরীক্ষানিরীক্ষা করেন।

গবেষক দলে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের প্রভাষক সাইফ শাহরুখ। তিনি বলেন, ‘আমরা ঢাকার চারটি লোকেশন থেকে চারটি গাছের নমুনা নেই। ন্যাশনাল বোটানিক্যাল গার্ডেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, ফার্মগেট ও গাবতলী থেকে এসব নমুনা সংগ্রহ করা হয়।

প্রতিটি লোকেশন থেকেই চারটি গাছের নমুনা নেওয়া হয়। পরীক্ষানিরীক্ষা করে দেখা গেছে, ঢাকার দূষণের ধরনের আলোকে আম ও বট সবচেয়ে বেশি দূষণ সহনীয় বৃক্ষ। গবেষকরা জানান, শহুরে গাছগুলো পাতার উপরি ভাগে ধূলিকণা জমিয়ে রেখে বায়ুমণ্ডল থেকে পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম) অপসারণের মাধ্যমে বায়ুর গুণমান উন্নত করতে সক্ষম।

সাইফ শাহরুখ বলেন, আমাদের গবেষণাটির প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল বায়ুদূষণের শিকার রাস্তার পাশের বিভিন্ন প্রজাতি বৃক্ষের স্থিতিস্থাপকতা মূল্যায়ন করা। অত্যন্ত দূষিত পরিবেশে কোন গাছ বেশি সহনশীল, তা খুঁজে বের করতে চেয়েছি। তাতে দেখা যায়, শহুরে বন উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত উদ্ভিদ বট।

বটগাছ বেশ কয়েকটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বায়ু পরিশোধন করতে পারে উল্লেখ করে গবেষকরা জানান, বৃহদাকৃতির এ গাছের পাতা অনেক বেশি ধূলিকণা শোষণ করে এবং পত্ররন্ধ্র ব্যবহার করে শোষণ করে নেয় গ্যাসীয় দূষণ। ঘন ও বড় পাতার কারণে বটবৃক্ষ বেশি দূষণ সহনীয় উল্লেখ করে সাইফ শাহরুখ বলেন, ‘?আমরা দেবদারু ও অশ্বত্থ গাছের নমুনা পরীক্ষা করে দেখেছি। সেগুলোর দূষণ সহনক্ষমতা বটের চেয়ে কম।

বিশেষ করে দেবদারুর অবস্থা একেবারেই খারাপ। এর কারণ হলো গাছটির পাতাগুলো বেশ ধূলিকণা । ফলে বাতাসের সময় দূষিত কণা দেবদারুর পাতায় অত বেশি আটকায় না, যতটা না বটবৃক্ষে জমা হয়। তাছাড়া বায়ুদূষণ শোষণের ক্ষেত্রে অন্য গাছগুলো থেকে বট বেশ কার্যকর। বায়ুদূষণে বটবৃক্ষ কার্যকর ভূমিকা রাখলেও প্রয়োজনের তুলনায় মেগাসিটি ঢাকায় তা একেবারেই অপ্রতুল।

গাছটির কোনো পরিসংখ্যানও পাওয়া যায়নি। বন অধিদপ্তর, ন্যাশনাল হারবেরিয়াম, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও পরিবেশ অধিদপ্তরে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, বটগাছের সংখ্যার বিষয়টি তাদের জানা নেই। এ নিয়ে কোনো কাজ হয়েছে কি না, সে বিষয়েও তথ্য দিতে পারেননি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

তবে করোনার সময় একটি গবেষণার কাজে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ৭৩টির মতো বটগাছ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন। বিভিন্ন লোকেশনে এ গাছগুলো দেখা গেছে বলে জানান তিনি। ড. জসীম উদ্দিন বলেন, ‘ঘনবসতিপূর্ণ একটি নগরীর দূষণ প্রতিরোধ ও বন্যপ্রাণী সুরক্ষায় যে পরিমাণ বটগাছ প্রয়োজন তা ঢাকায় নেই।

এখন আর বিভিন্ন পার্ক, নদীর ধারে খুব একটা বটবৃক্ষ চোখে পড়ে না। এ গাছ যে কেবল বায়ুদূষণ প্রতিরোধ করে তা-ই নয়, এটা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বটগাছ থাকলে এখানে নানা ধরনের পাখি আসবে, প্রাণী আসবে, বাসা বাঁধবে। তাই ঢাকায় পর্যাপ্ত বটগাছ রোপণের বিষয়ে নগর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে মনোযোগী হতে হবে।

আমরা করোনার সময় যে গাছের সংখ্যা দেখেছি। এখন হয়তো সেটিও নেই। দেশীয় প্রজাতির গাছ বিভিন্ন জায়গায় লাগানোর ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের রাজধানীতে বিভিন্ন রোড ডিভাইডারে বিদেশি গাছ লাগানোর প্রবণতা বেশি। অথচ ঢাকায় দেশীয় গাছ এখন চোখে পড়ে না।

উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা জানান, বৃহদাকার বটগাছ অনেক জায়গা জুড়ে ভূমির সমান্তরালে শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে। খুব অল্প বয়স থেকেই গাছটির বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা থেকে ঝুরি নামতে শুরু করে। একসময় সেগুলো মাটিতে গেঁথে গিয়ে নিজেরাই একেকটা কাণ্ডে পরিণত হয়। এভাবেই বটগাছ ধীরে ধীরে চারপাশে বাড়তে থাকে এবং পরিণত হয় মহিরুহে।

বাংলা গেজেট/এফএস


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর