news2bdgazette@gmail.com বৃহঃস্পতিবার, ৯ই মে ২০২৪, ২৬শে বৈশাখ ১৪৩১

ক্রেতাদের মাথাব্যথা বাড়াচ্ছে রমজানে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত:
১৩ মার্চ ২০২৪, ০৯:৩৬

ছবি: সংগৃহীত

রমজানের পবিত্র মাস শুরু হতে না হতেই, দেশের বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামের উল্লম্ফন লক্ষ্য করা গেছে। মাছ, মাংস, সবজি, ছোলা, ডাল, খেজুর সহ রোজার মাসে গ্রাহকের চাহিদাসম্পন্ন প্রতিটি পণ্যের দাম হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। এতে করে সকল শ্রেণীপেশার মানুষ, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলি বেশি বিপাকে পড়েছে।

মাসটি যদিও পুণ্যের, তবুও বেশি মুনাফার আশায় ব্যাকুল থাকে এক শ্রেণির অসৎ ব্যবসায়ী। লাভের পিছু ছুটছে তারা এমন একটি প্রথায় আবদ্ধ হয়ে। এ বছরও পরিবর্তনের কোনো ইঙ্গিত নেই। এই মাস শুরু হওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই নানান অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেতে থাকে। সরকার রোজা উপলক্ষে বাজার নিয়ন্ত্রণের নানা আশ্বাস দিলেও, সেই নিয়ন্ত্রণ আদৌ সম্ভব হচ্ছে না। ছোলা থেকে বেগুন, লেবু থেকে শুরু করে মাছ-মাংস পর্যন্ত প্রায় সব কিছুর দামে আগুন লেগেছে।

নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, এর ফলে রোজা উপলক্ষে সাধারণ মানুষের খরচ আরও বেড়ে গেছে। মূল্যস্ফীতির চাপে যেসব সীমিত ও নিম্ন আয়ের মানুষ আগে থেকেই কষ্ট পাচ্ছিল, রমজান মাস তাদের উপর চাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। রমজানের অতিরিক্ত খরচের চিন্তায় সাধারণ মানুষ দুশ্চিন্তিত।

রাজশাহীর বাজারে দেখা যায়, রোজার এক মাস আগে থেকেই ছোলা, অ্যাংকর, মুগ এবং বিভিন্ন ধরণের ডালের দাম বেড়ে গেছে। খেজুরের দাম আকাশচুম্বী। চিনির বাজারে অস্থিরতা চোখে পড়ে। সয়াবিন তেলের দাম যদিও কিছুটা কমেছে, তবে তা বিশ্ববাজারের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য। ব্রয়লার মুরগি এবং ডিমের দাম উচ্চ রয়েছে। চিড়ামুড়ির দামও বেড়েছে। সবজির মধ্যে বেগুন, শসা, লেবু সহ কয়েকটি পণ্যের দাম বাড়তি।

সরকারের পক্ষ থেকে সরবরাহ সংকটের কোনো খবর না থাকলেও, ক্রেতারা অভিযোগ করছেন যে, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এবং আমদানিকারক রমজানকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত মুনাফার আশায় দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এর ফলে বাজারে একটি অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে, যা রোজার মাসের পূর্ণ সময়ে আরও বিপর্যয়ের আশঙ্কা সৃষ্টি করছে।

বাজার বিশ্লেষকরা জানান, এ বছর বিশেষ করে ছোলার আমদানি ব্যয় বেড়েছে এবং খেজুরের উচ্চ শুল্কের কারণে তার দাম আরও বেড়ে গেছে। চাল, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, চিড়া এবং মাংসের বাজারেও দামের ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। এর মধ্যে কেবল মাছের বাজারেই কিছুটা স্বস্তি রয়েছে।

বিশেষ করে ছোলা ও খেজুরের দামে লাফিয়ে বৃদ্ধি ক্রেতাদের জন্য চাপে ফেলেছে। রমজানের সময় এই দুই পণ্যের চাহিদা অনেক বেশি থাকায়, দাম বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জন্য বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক ক্রেতা বলছেন, বাজেটের মধ্যে কিনতে গিয়ে তারা অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন।

এ প্রেক্ষাপটে, সরকারি পক্ষ থেকে মূল্য স্থিতিশীল রাখতে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বাজার মনিটরিং এবং অভিযান বৃদ্ধি করা হয়েছে, এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও, রমজানের মাস জুড়ে সরকারি বাজারে সুবিধাজনক মূল্যে পণ্য সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তবে, বাস্তবে এসব উদ্যোগ কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে মিশ্র মত প্রকাশ পাওয়া যাচ্ছে। অনেকে মনে করেন, বাজারে সরাসরি নজরদারি এবং স্থানীয় প্রশাসনের আরও সক্রিয় ভূমিকা ছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়।

রমজানের মাসে ন্যায্য দামে পণ্য কেনার অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জোরালো হচ্ছে, এবং সকলের প্রত্যাশা, সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ এই দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে আগামী দিনগুলোতে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।

সাহেব বাজার সহ বিভিন্ন খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে ছোলা প্রতি কেজি ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর ৬৫ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। সপ্তাহ খানেক আগে এর দাম ছিল ৯৫ থেকে ১০০ টাকা। সাদা মোটর কেজি প্রতি ৮০ টাকা, মশুর ডাল ১৩০ টাকা এবং খেসারি ডালের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে, বর্তমানে খেসারি ডালের দাম কেজি প্রতি ১৪০ টাকা। চিড়া প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যার গত বছরের দাম ছিল ৫০ টাকা। তেলের দাম স্থিতিশীল থাকা সত্ত্বেও, খেজুরের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে; এ বছর সর্বনিম্ন মানের খেজুর ২০০ টাকা এবং মধ্যম মানের খেজুর ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সর্বোচ্চ মানের খেজুরের দাম পৌঁছেছে ১২০০ টাকা পর্যন্ত।

বাজারে মোটা সিদ্ধ চাল ৫৫ টাকা, আতপ চাল মানভেদে ৬০ থেকে ৯০ টাকা, জিরাসাল চাল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, বাসমতি ৮০ টাকা, কালোজিরা ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, চিনিগুরা ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার ও সোনালী মুরগির দাম বেড়েছে; ব্রয়লারের কেজি বর্তমানে ২২০ টাকা এবং সোনালী মুরগি ৩২০ টাকা কেজি। গরুর মাংসের দাম ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং মাছের দাম অন্য বছরের তুলনায় কম। তেলাপিয়া ১৪০ টাকা, রুই মাছ প্রায় ২৮০ টাকা এবং সিলভার কাপ ১৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

সাহেব বাজারের মুদী ব্যবসায়ী মুমিনুল আলম বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম কমলেও আমাদের দেশে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমদানির খরচ বেড়ে গেছে।

রাজশাহী শহরের রিকশা চালক জসিম মিয়া বলেন, আমরা দিন আনি দিন খাই, এমনিতেই সব কিছু দাম বেশি যদি রোজার মাসে সব কিছুর দাম আরো বেড়ে যায় তাহলে আমরা খাব কিভাবে? চলবো কিভাবে? আমাদের রোজা থাকায় কষ্টকর হয়ে যাবে।

দামের ঊর্ধ্বগতির বিষয়ে সাহেব বাজারের খুচরা বিক্রেতা আমজাদ ইসলাম বলেন, আমরা পাইকারি বাজার থেকে দু’এক বস্তা পণ্য এনে বিক্রি করি। ক্রয়মূল্যের তুলনায় কেজিতে ১-২ টাকা লাভ করে পণ্য বিক্রি করে থাকি। এখন প্রতিযোগিতামূলক বাজার, কোনো খুচরা দোকানদার চাইলেও বেশি দামে পণ্য বিক্রি করতে পারবে না। কারণ ক্রেতারা এখন বেশি সচেতন। পাইকারদের থেকে একটা নির্দিষ্ট মুনাফায় খুচরা ব্যবসায়ীরা পণ্য কেনেন। বর্তমানে দোকান ভাড়া, গ্যাস ও বিদ্যুৎ খরচ বেড়েছে। আমাদের অতি মুনাফা করার সুযোগ নেই।

জাহিদুল আলম মানিক নামে বেসরকারি এক চাকরিজীবী বলেন, রমজান মাসকে সংযমের মাস বলা হয়। কিন্তু আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের কাছে এই মাসটি টাকা উপার্জনের জন্য খুবই ভালো একটি মাস। মুসলিম সম্প্রদায়ের রমজান ছাড়াও ঈদের জামা-কাপড়সহ আনুষাঙ্গিক খরচ রয়েছে। এতে এই মাসে আমাদের মতো সীমিত আয়ের মানুষকে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। অন্তত রমজান মাসে হলেও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে আরও বেশি তৎপর হওয়া উচিত।

রাজশাহী বিভাগীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো ইব্রাহিম হোসেন বলেন, বাজার স্থিতিশীল করার জন্য প্রতিনিয়ত ভোক্তা অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে। রোজার আগের দিন ও বাজার গুলোতে অভিযান চালানো হয়েছে। যারা অসৎ উপায় অবলম্বন করে বাজারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। খেজুরের উপর শুল্ক বেশি হওয়ায় বাজারে অন্য সব কিছুর তুলনায় খেজুরের দাম তুলনমূলকভাবে বেশি । তবে কেউ যদি এটির সুযোগ নিয়ে অন্যায় ভাবে ব্যাবসা করে তাহলে প্রমাণ সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর