news2bdgazette@gmail.com বৃহঃস্পতিবার, ৯ই মে ২০২৪, ২৬শে বৈশাখ ১৪৩১

সূর্যমুখী চাষে লোকসান, চাষিরা খুঁজছেন বিকল্প পথ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত:
১৩ মার্চ ২০২৪, ০৯:৩৮

ছবি: সংগৃহীত

সূর্যমুখীর হলুদ প্রান্তর এখন হতাশার কারণ। এক সময়ের লাভজনক ফসল হিসেবে পরিচিত, সূর্যমুখী চাষ এখন অনেক কৃষকের কাছে আর্থিক বোঝায় পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন অনিশ্চয়তা, যেমন অপ্রত্যাশিত আবহাওয়া, উৎপাদন খরচের বৃদ্ধি, এবং বাজারে সূর্যমুখীর তেলের দামে অস্থিরতা কৃষকদের মাঝে গভীর হতাশা সৃষ্টি করেছে। এই চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির মুখে, অনেক চাষি এখন বিকল্প ফসলের দিকে নজর দিচ্ছেন, যা তাদের সংসারের জীবিকার জন্য আরও নিরাপদ এবং লাভজনক হতে পারে। এই পরিবর্তনের মাঝে কৃষকেরা এই বাঁক বদলের মুখে তাদের চাষাবাদের কৌশল পরিবর্তন করছেন এবং বিকল্প পথ খুঁজছেন।

রাজশাহীতে গত চার বছরে সূর্যমুখী ফুলের চাষে হার কমেছে হতাশাজনক মাত্রায়। চলতি বছরে পুরো জেলায় সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে মাত্র ২২ হেক্টর জমিতে, যেখানে ২০২১ সালে জেলায় এই ফুলের চাষ হয়েছিল ১৫৪ হেক্টর জমিতে। কৃষি অফিস বলছে, লাভজনক না হওয়ায় সূর্যমুখীর চাষে হার কমেছে। চাষিরা অন্য ফসলে ঝুঁকেছেন। একই সঙ্গে প্রণোদনাও ফ্যাক্টর ছিল। কারণ প্রণোদনার বছর সর্বোচ্চ সূর্যমুখীর চাষ হয়েছিল। তার পরের বছরগুলোয় কমে আসায় তলানিতে ঠেকেছে চাষ।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে সরকারিভাবে সূর্যমুখী চাষে প্রণোদনা দেয়া হয়েছিল। সেই বছরে ব্যাপক হারে রাজশাহীতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছিল। জেলার সর্বোচ্চ ১৫৪ হেক্টর জমিতে এই ফুলের চাষ হয়েছিল। এতে ফলন হয় ২০৪ মেট্রিক টন। পরবর্তী বছরে সূর্যমুখীর চাষে হেক্টরের সংখ্যা কমে আসে এবং ফলন হয় ৪৫ মেট্রিক টন।

এ ছাড়া, ২০২৩ সালে জেলায় সূর্যমুখীর চাষে হার আরো কমে আসে, সেখানে এই ফুলের চাষ হয় ২৯ হেক্টর জমিতে। ২০২২ সালের তুলনায় চাষের জমি কমে আসে ১০ হেক্টর। ফলন হয় ৩৮ দশমিক ৮ মেট্রিক টন। সর্বশেষ ২০২৪ সালে জেলায় সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে মাত্র ২২ হেক্টর জমিতে। এ বছর জেলার গোদাগাড়ী উপজেলায় সবচেয়ে বেশি পাঁচ হেক্টর জমিতে এই ফুলের চাষ হয়েছে। এ ছাড়া, পবা, তানোর ও মোহনপুর উপজেলায় তিন হেক্টর করে জমিতে এই ফুলের চাষ হয়েছে। বাগমারা, দুর্গাপুর এক হেক্টর করে হলেও পুঠিয়া, চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় দুই হেক্টর করে জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে।

কৃষি দপ্তরের তথ্যানুসারে, ২০২১ সালে জেলাজুড়ে ১৫৪ হেক্টর ভূমিতে সূর্যমুখীর চাষাবাদ হয়েছিল। সে বছর, গোদাগাড়ী উপজেলাতে সর্বাধিক ৬০ হেক্টর জমিতে এই ফসলের আবাদ করা হয়েছিল। উপজেলাভিত্তিক উৎপাদন পরিমাণ হল, গোদাগাড়ীতে ৩৯ মেট্রিক টন, পবায় ২৪ হেক্টর জমিতে ৩১.২ মেট্রিক টন, তানোরে ১৪ হেক্টরে ১৮.২ মেট্রিক টন, মোহনপুরে ৫ হেক্টরে ৬.৫ মেট্রিক টন, দুর্গাপুরে ২ হেক্টরে ২.৬ মেট্রিক টন, পুঠিয়ায় ৩ হেক্টরে ৩.৬ মেট্রিক টন, চারঘাটে ৬ হেক্টরে ৭.২ মেট্রিক টন এবং বাঘায় ১০ হেক্টরে ১২ মেট্রিক টন।

২০২২, ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে রাজশাহী জেলার সূর্যমুখী চাষের গড় প্রবণতা পর্যালোচনা করলে গোদাগাড়ী উপজেলায় চাষের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায়। ২০২২ সালে এখানে ৯ হেক্টরে চাষ হয়েছিল, যা আগের বছরের তুলনায় ২১ হেক্টরে ছিল। ২০২৩ সালে চাষের পরিমাণ ৭ হেক্টরে নেমে আসে এবং চলতি বছরে তা আরও কমে ৫ হেক্টরে পৌঁছায়। অন্যদিকে, বাঘা উপজেলায় এ বছর মাত্র ২ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে, যা প্রণোদনা বছরে ১০ হেক্টর ছিল। ২০২২ সালে চাষের পরিমাণ ছিল ৩.৩ হেক্টর এবং ২০২৩ সালে তা বেড়ে ৮ হেক্টর হয়।

গত বছর সূর্যমুখী চাষ করা সত্ত্বেও এ বছর চাষ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উপজেলার কৃষক আলমগীর হোসেন। তিনি জানান, গত বছর তার এক বিঘা জমিতে চাষ করা সূর্যমুখীর ফলন আশানুরূপ ছিল না। এই কারণে তিনি এ বছর চাষ থেকে বিরত রয়েছেন। একই কারণে এলাকার অনেক চাষী এই বছর সূর্যমুখীর চাষ করেননি।

গোদাগাড়ীর এক চাষি প্রথমবারের মতো এই ফসল চাষ করছেন এবং ফলন নিয়ে তিনি আশাবাদী। তার জমিতে সূর্যমুখী ফুল ভালোভাবে ফুটেছে এবং তিনি ভালো ফলনের প্রত্যাশা করছেন।

অন্যদিকে, সর্বাধিক চাষের উপজেলা বাগমারায় এই বছর মাত্র এক হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। যদিও প্রণোদনার বছরে এই উপজেলাগুলোতে সর্বাধিক ৬০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিল, তবে সেই সংখ্যা ২০২২ সালে ৫ হেক্টরে এবং ২০২৩-২৪ সালে ১ হেক্টরে নেমে আসে।

বাঘা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, সূর্যমুখী চাষ অঞ্চলে হ্রাস পেয়েছে। এ বছর উপজেলায় মাত্র ২ হেক্টর জমিতে এর চাষ করা হয়েছে। লাভের পরিমাণ কম হওয়ায় চাষীরা এই ফসল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন এবং অন্যান্য ফসলে মনোনিবেশ করেছেন। দুর্গাপুরে প্রণোদনার বছরে এই উপজেলায় সূর্যমুখী চাষ আরও বেশি হয়েছিল, যা ২ হেক্টর জমিতে পৌঁছেছিল। বিগত বছরগুলোতে যথাক্রমে ২০২২ সালে ৫ হেক্টর, ২০২৩ সালে ১ হেক্টর এবং চলতি বছরে আবার ১ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেছেন, সূর্যমুখী চাষ কমে গেছে। ২০২১ সালে প্রণোদনা ছিল। সেই বছর বেশি এই ফুলের চাষ হয়েছিল। এর চেয়ে যে ফসলগুলো লাভজনক সেই ফসলে ঝুঁকেছেন চাষিরা।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর