news2bdgazette@gmail.com শুক্রবার, ৩রা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১

চৈত্রের খরতাপে বিপর্যস্ত বরেন্দ্র অঞ্চল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত:
১৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৯:০১

ছবি: সংগৃহীত

চৈত্র মাসের প্রখর সূর্যতাপ বরেন্দ্র অঞ্চলের জীবনযাত্রা ও কৃষি কার্যক্রমকে তীব্রভাবে প্রভাবিত করেছে। তীব্র খরতাপ এবং অনবরত খরা অবস্থার কারণে রাজশাহী অঞ্চলের কৃষকরা ফসল উৎপাদনে গভীর সংকটে পড়েছেন। এ অঞ্চলটি এই সময়ে প্রায় প্রতি বছরই প্রচণ্ড তাপদাহের মুখে পড়ে। এ বছর অস্বাভাবিকভাবে উচ্চ তাপমাত্রা ও দীর্ঘস্থায়ী শুষ্ক মৌসুমের ফলে জলাভাব সৃষ্টি হয়েছে। যা কৃষি জমিগুলিতে পানির প্রাপ্যতা হ্রাস করেছে। সেচের অভাবে ফসল উৎপাদন ব্যাপক হ্রাস পাচ্ছে। উত্তপ্ত আবহওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। মানুষের পাশাপাশি পশু-পাখিরাও হাঁসফাঁস করছে। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই। প্রখর রোদে পথ-ঘাট-মাঠ সবকিছুই উত্তপ্ত।

একটু শীতল প্রশান্তির আশায় শিশু-কিশোররা পুকুর, নদী-নালার পানিতে নেমে খেলা করছে। পথচারীরা টিউবওয়েলের পানিতে মুখ ভিজিয়ে উত্তপ্ত আবহাওয়ার ক্লান্তি থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন। প্রচণ্ড গরমে তাদের মুখে স্বস্তির ছায়া নেই। বরেন্দ্র অঞ্চলের এমন উত্তপ্ত আবহাওয়া শুধু দৈনন্দিন জীবনের উপরই নয়, জনস্বাস্থ্যের উপরেও গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, অত্যধিক গরমে জলশূন্যতা ও হিট স্ট্রোকের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই সঙ্গে অপর্যাপ্ত পানির যোগান এই সমস্যাকে আরও জটিল করছে। বিশেষজ্ঞরা এই প্রেক্ষাপটে জরুরী পানীয় জল ও পর্যাপ্ত বিশ্রামের পরামর্শ দিচ্ছেন।

রাজশাহীতে বুধবার (১৭ এপ্রিল) সর্বোচ্চ ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বেলা ১১টা গড়াতেই রাস্তা-ঘাট জনশূন্য হয়ে পড়ে। কিন্তু আগুনঝরা আবহাওয়ায় স্বস্তি মিলছে না ঘরেও। তাই ভোগান্তিতে থাকা মানুষ প্রশান্তির বৃষ্টির জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছেন।

স্থানীয় পবা উপজেলার কৃষক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, এবারের তাপমাত্রা আগের চেয়ে বেশি অনুভূত হচ্ছে। আমাদের ধানের ফসলে পানি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, ফলে ফসলের অবস্থা খুবই খারাপ। এমন অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যত উৎপাদন ও অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব পড়বে।

নগরীর অটোরিকশা চালক ইদ্রিস আলী বলেন, রাজশাহী শহরে দুই শিফটে অটো চলাচল করে। সকালের শিফটে লাল চললে বিকেলের শিফটে চলে সবুজ রঙের অটোরিকশা। সকালের শিফটে গরম অত্যন্ত প্রখর হয়। আমি বর্তমানে সকালের শিফটে গাড়ি চালাই। দিনের বেলা যত বাড়ে, ততই তাপদাহ ও কষ্ট বাড়তে থাকে। কঠিন রোদ সত্ত্বেও, অটোরিকশা চালানো আমার কাছে একটি অনিবার্য কর্তব্য।

এই বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যেও স্বস্তির বার্তা নেই আবহওয়া অফিসের কাছে। রাজশাহী আবহওয়া অফিসের তথ্যমতে, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ২৫ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৩০ শতাংশ।।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক রাজীব খান বলেন, আপাতত রাজশাহীতে বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। তবে মেঘের সঙ্গে বজ্রপাত হতে পারে। মার্চের শেষের দিকেও রাজশাহীতে এমন আবহাওয়া ছিল না। ওই সময় রাতের দিকে শীত অনুভব হত। তাপমাত্রা উঠানামা করত ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। তবে এপ্রিলের পথম সপ্তাহ থেকেই তাপমাত্রা বাড়তির দিকে। আরও কিছুদিন এমন থাকতে পারে।

এদিকে, হঠাৎ পরিবর্তিত এই অবহওয়ায় অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে বলে জানা গেছে। আর এ সময় সর্তক থাকার আহ্বান জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সাবেক-বিভাগীয় প্রধান ডা. খলিলুর রহমান বলেন, গত কয়েক দিন থেকে হঠাৎ করে আবারও তাপমাত্রা বাড়ায় ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন উপসর্গে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এসব রোগে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। পাশাপাশি এ তীব্র গরমে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ও হৃদরোগে আক্রান্তদের দুর্ভোগও বেড়েছে।

তিনি বলেন, এ সময় সতর্ক থাকতে হবে। পর্যন্ত বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। যাতে শরীর ঠিক মতো হাইড্রেটেড থাকে। ঘামের মাধ্যমে হারানো তরল ও খনিজ উপাদানগুলো যেন পুনরায় পূরণ হতে পারে। সানস্ক্রিনের ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যেহেতু সূর্যের ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে ত্বক রক্ষা পায়। গরমের সময় হালকা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরা উচিত যা শরীরের তাপ নির্গমনে সহায়ক। তাপমাত্রা যখন চরমে পৌঁছায়, তখন যতটা সম্ভব শীতল ও ছায়াশীতল স্থানে থাকা উচিত এবং দুপুরের দিকে বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। এই সব পদক্ষেপ মেনে চললে গরমের প্রভাব থেকে সুরক্ষিত থাকা সম্ভব।

 


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর