news2bdgazette@gmail.com সোমবার, ২০শে মে ২০২৪, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বজ্রপাতে ১২ জনের মৃত্যু

সারাদেশে ঝড় বৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতি

সারাদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত:
৭ মে ২০২৪, ০৮:১৫

ফাইল ছবি

কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ফসল নষ্টসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপড়ে গেছে গাছপালা ও ঘরের চাল। খুঁটি ভেঙে এবং ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে ব্যাহত হয়েছে বিদ্যুৎ পরিষেবা। সড়ক-মহাসড়কে গাছপালা ভেঙে পড়ে সাময়িক ব্যাহত হয়েছে যানবাহন চলাচলও। খবর সমকাল।

 গতকাল সোমবার দেশের সর্বোচ্চ ১৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ফেনী জেলায়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে চট্টগ্রামে; ১২৯ মিলিমিটার।

এর মধ্যেই গত রোববার রাতে কালবৈশাখীতে দেয়াল ধসে রাজধানীতে এক নারী ও সাভারের ধামরাইতে দুই নিরাপত্তাকর্মী নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া বজ্রপাতে আগের দিন রাত থেকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত শরীয়তপুরে তিনজনসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন জানান, সিলেট, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও ঢাকা বিভাগে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা ছিল বেশি। আগামী সাত দিনও সারাদেশে বিচ্ছিন্ন বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে।

আবহাওয়ার ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ মঙ্গলবার রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে হতে পারে শিলাবৃষ্টি। সারাদেশে আজ দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেয়ে রাতে তা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

গত রোববার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যানে নির্মাণাধীন ১৬ তলা ভবনের দেয়াল ভেঙে পাশের একটি টিনশেড বাড়ির ওপর পড়ে রেশমা বেগম নামে এক নারী নিহত হয়েছেন।

আহত হয়েছেন ওই বাড়িতে বসবাস করা চার শিশুসহ আরও আটজন। পুলিশ জানায়, রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঝড়-বৃষ্টির সময় ঢাকা উদ্যান ব্লক-সির ১ নম্বর রোডের একটি ভবনের দশম তলার পশ্চিম পাশের দেয়াল ধসে নিচের টিনশেড বাড়ির ওপর পড়ে। হতাহতরা বিভিন্ন বাসাবাড়িতে কাজ করতেন। এ ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি। 

একই রাতে সাভারের ধামরাইয়ে কালবৈশাখীতে ঘরের দেয়াল ধসে আনিসুর রহমান ও শাহারুল আলম নামে দুই নিরাপত্তাকর্মী মারা যান। ধামরাইয়ের কুল্লা ইউনিয়নের বরাকৈর এলাকার এসএস এগ্রো কমপ্লেক্সে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

বজ্রপাতে ১২ জনের মৃত্যু

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের পাইনপাড়া আহমদ মাঝিকান্দি গ্রামে গতকাল সকালে বজ্রপাতে মারা যান আমেনা আক্তার নামে এক তরুণী।

প্রায় একই সময় বজ্রপাতে উপজেলার কুন্ডেরচর ইউনিয়নের আশ্রয়ণ প্রকল্পে মারা যান এক নির্মাণ শ্রমিক। নিহতের নাম জানা যায়নি। ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার চরসেনসাস ইউনিয়নে বেড়াচাক্কি গ্রামে সকালে বজ্রপাতে মারা যান গৃহবধূ কুলসুম বেগম।  


গতকাল সন্ধ্যার আগে গোপালগঞ্জে কাশিয়ানী উপজেলার হাতিয়ারা ইউনিয়নের পাথরগ্রামে বজ্রপাতে ধান কাটা শ্রমিক সুকান্ত ও কোটালীপাড়া উপজেলার আমতলীতে কৃষক আলমগীর শেখ মারা যান।

এর আগে সকালে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দিঘিরপাড় ৩ নম্বর পূর্ব ইউনিয়নে বজ্রপাতে নিহত হন মাহতাব উদ্দিন মাতাই নামে এক প্রবাসী।

হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার সাতপাড়িয়া গ্রামে মাঠে গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা যান দানিছ মিয়া নামে এক মাদ্রাসা শিক্ষক। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামে সকালে বজ্রপাতে নিহত হন সমুজ মিয়া নামে এক ব্যক্তি।

নেত্রকোনার আটপাড়ায় স্বরমুশিয়া হাওরে ধান কাটার সময় সকালে বজ্রপাতে মারা যান দিলওয়ার মিয়া নামে এক কৃষক। ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার কামালদিয়া ইউনিয়নের দত্তের কাপাসহাটিয়া গ্রামে দুপুরে বজ্রপাতে নিহত হন কৃষক মুরাদ মল্লিক। আহত হন তাঁর এক সহকর্মী। সন্ধ্যায় নগরকান্দা সদরের মদিনাতুল উলুম মাদ্রাসায় বজ্রপাতে ২১ ছাত্র আহত হয়েছে। 

গতকাল রাতে বরগুনার আমতলী উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের পূর্ব কুকুয়া বিলে বজ্রপাতে নিহত হয় হাফেজ আব্দুল্লাহ নামে এক কিশোর। সন্ধ্যায় ঝিনাইদহ সদরের শুলাকুড় মাঠে বজ্রপাতে আবুল হোসেন নিলাম নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। 

ঝড়ে বিভিন্ন স্থানে ক্ষয়ক্ষতি

আগের সন্ধ্যা থেকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কালবৈশাখীতে চট্টগ্রাম নগরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর, ময়মনসিংহের ত্রিশাল, চুয়াডাঙ্গা, নেত্রকোনার কেন্দুয়া, ফেনীসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নাসিরনগর উপজেলা ও সরাইলের অরুয়াইল ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম ৩০ ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

গতকাল বিকেলে বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরীর নিচু এলাকাগুলোতে হাঁটুপানি জমে যায়। ঝড়ে অনেক স্থানে গাছ উপড়ে সড়কে যান চলাচল ও বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হয়।

দুপুরে ঝড়ে সীতাকুণ্ডের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি বড় গাছ উপড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তিন ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা গাছগুলো কেটে নেওয়ার পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। একই অবস্থা সৃষ্টি হয় উপজেলার ভাটিয়ারী কদমরসুল এলাকাতে।

ঝোড়ো হাওয়ার মধ্যে পড়ে কলকাতা থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি বিমান গতকাল বিকেলে কক্সবাজার বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে।

বাংলা গেজেট/এফএস


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর