news2bdgazette@gmail.com সোমবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৪, ১৬ই বৈশাখ ১৪৩১

নগরের ভবনের ঝুঁকি নিরসনে করণীয়

ড. আতিউর রহমান

প্রকাশিত:
৬ মার্চ ২০২৪, ১৭:৩৯

ফাইল ছবি

স্মরণ করিয়ে দিতে চাই রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির কথা। ২০১৩-এর ঐ ঘটনায় কেবল আমরা এক হাজার প্রাণ হারিয়েছিলাম তাই নয়। অনেকে আশঙ্কা করছিলেন যে, অর্ধকোটি খেটে খাওয়া মানুষের আয়ের উৎস এবং দেশের ৮০ ভাগের বেশি রপ্তানি আয়ের উৎস যে খাত সেই আরএমজি খাতই হয়তো বড় হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির কারণে। তবে আমাদের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নীতি-নির্ধারক থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনের তরুণ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তারা উদ্ধারকাজ এবং পরবর্তিতে পুনর্বাসনে যে নিষ্ঠা দেখিয়েছেন তার সুবাদে আমাদের আরএমজি খাতের সুনাম হুমকির মুখে পড়েনি। বরং এ খাতের কর্মীদের প্রতি রাষ্ট্রের সংবেদনশীলতার সুবাদে আমাদের সুনাম বেড়েছে। রানা প্লাজার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সম্ভব হয়েছিল সরকারের পাশাপাশি আমাদের পুরো সমাজ এমন কি বিদেশী বায়াররাও সম্মিলিতভাবে সচেষ্ট হয়েছিলেন বলে। রানা প্লাজা বিপর্যয় পরবর্তি পরিস্থিতি যেভাবে আমরা মোকাবিলা করেছি তাকে এখন একটি আদর্শ মডেল হিসেবে বিবেচনা করা যায়।

রানা প্লাজা থেকে প্রধান যে শিক্ষাটি আমরা পেয়েছিলাম তা হলো রাষ্ট্র একা নয় বরং ব্যক্তি খাতের পাশাপাশি পুরো সমাজ একযোগে কাজ করেছিলো বলেই ওই মহাদুর্যোগের পরও আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছিলাম। আজকে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, দশ-এগারো বছর আগের তুলনায় আমাদের গার্মেন্ট খাত এখন অনেক বেশি কমপ্লায়েন্ট এবং সেখানে কর্মীদের কাজের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমরা বহুলাংশে সফল হয়েছি। স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে এখন বিশ্বের শীর্ষ সবুজ কারখানাগুলোর তালিকায় প্রথম একশোর মধ্যে বাংলাদেশের রয়েছে উজ্জ্বল উপস্থিতিতে। সঙ্কট থেকে সম্ভাবনায় উত্তরণের এই অভিজ্ঞতার আলোকেই সর্বশেষ বেইলি রোডের একটি ভবনের অগ্নিকাণ্ডের বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রানহানি এবং এই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আমাদের অসহায়ত্বের বিষয়গুলো আলো ফেলতে চাই।

এই ট্র্যাজেডির পরপরই নতুন করে ভবন বিপজ্জনকতার বিষয়টি বৃহত্তর জনপরিসরে আবার সামনে এসেছে। সত্যি বলতে বিশেষ করে ঢাকার ভবনগুলোর ঝুঁকি এবং এগুলো যারা ব্যবহার করছেন তাদের নিরাত্তাহীনতা নিয়ে সংবেদনশীল ব্যক্তি ও নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলো বেশ কিছুকাল ধরেই সোচ্চার আছেন। সরকারের তরফ থেকেও সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো যথাসম্ভব চেষ্টা করছেন বলেই আমরা মনে করি। তবে নাগরিকদের দুর্ভাবনা ও দাবিগুলোর বিষয়ে সংবেদনশীল হওয়ার পরেও অনেক সময় সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভাগগুলো কাঙ্ক্ষিত ফলাফল নিয়ে আসতে পারছেন না। প্রথমত বিশাল এবং তদুপরি দ্রুত বর্ধিষ্ণু শহর হিসেবে ঢাকা, চট্টগ্রাম কিংবা অন্য শহরগুলোর ব্যবস্থাপনা ও তদারকি খুবই দুরূহ একটি কাজ। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অনানুষ্ঠানিকতার বাহুল্যের কারণে এই তদারকি আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে। দ্বিতীয়ত সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের জন্য প্রয়োজনীয় জনবল ও সম্পদেরও একটা সঙ্কট আমাদের রয়েছে সেটা মানতেই হবে। বিপুল চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও আমাদের গণবান্ধব এবং জনস্বার্থের প্রতি সংবেদনশীল নীতি-নির্ধারকেরা এমন ট্র্যাজেডি ঠেকাতে সর্বাত্মক সচেষ্ট হবেন সে বিশ্বাস আমাদের আছে। গতকালের সংবাদ মাধ্যমেই আমরা দেখেছি যে ইতোমধ্যে অনেক এলাকায় যথাযথ

সুরক্ষা ব্যবস্থাপনা না থাকায় অনেক ভবনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া শুরু হয়েছে। নাগরিক সমাজের দিক থেকে বিশেষত যারা স্থপতি এবং এসব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ তাদের দিক থেকে সুনির্দিষ্ট পরামর্শ গেলে সেগুলোও নিশ্চয় নীতি-নির্ধারকরা যথাযথভাবে আমলে নিবেন।

ভবন নির্মাণ অনুমোদন এবং পরে অনুমোদিত নকশা মেনে কাজ চলছে কি-না সেটা দেখার দায়িত্বে যারা আছেন তাদের ওপরে যে বিপুল দায়িত্ব বা কাজের চাপ এবং তাদের সম্পদ ও জনবলের যে অভাব সে বিষয়ে আমরা নিশ্চয় সংবেদনশীল থাকবো। তবে একই সঙ্গে এ কথাও বারবার স্মরণ করিয়ে দিতে হবে যে, যেখানে মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্ন সেখানে আদতে ন্যূনতম আপোসেরও কোন সুযোগ নেই। সাম্প্রতিক ট্র্যাজেডির পরপরই পত্রপত্রিকায় নতুন করে উঠে এসেছে যে এর আগে বিভিন্ন ভবনে বা কারখানায় অবহেলাজনিত কারণে প্রাণহানির ঘটনা ঘটার পর প্রাথমিক কিছু তৎপরতা দেখা গেলেও শেষ পর্যন্ত অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিভিন্ন পক্ষ একে অপরের ওপর দোষ চাপানোর সুবাদে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা যায়নি।

একজন অর্থনীতিবিদ হিসেবে আমি নিজে এবং দেশের সকল অর্থনীতিবিদেরাই আগামী ১০-১৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ একটি উচ্চ আয়ের দেশ এবং উন্নত দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে- এমন সম্ভাবনা দেখি। একই সঙ্গে এ দেশের আগামী দিনের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার পথে প্রধান যে চ্যালেঞ্জগুলো অর্থনীতিবিদরা দেখতে পান তার মধ্যে যথাযথ নগরায়ন ও নগর ব্যবস্থাপনা অন্যতম। দেশীয় শিল্পের বিকাশ হোক, দেশীয় উদ্যোক্তা তৈরির পরিবেশ উন্নয়ন হোক কিংবা আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আকৃষ্টা করা হোক- সকল ক্ষেত্রেই যথাযথ নগর ব্যবস্থাপনার ওপর আমাদের সাফল্য বহুলাংশে নির্ভর করছে।

কাজেই ভবন অনুমোদন, নির্মাণ ও ব্যবহার তদারকির ক্ষেত্রে অনিয়মগুলো চিহ্নিত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতেই হবে। ভবন মালিক এবং/অথবা নির্মাণকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যারা দায়ী তাদেরকেও ছাড় দেয়া যাবে না। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে এমন দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা কমাতে তা সহায়ক হবে। তবে অপরাধ ঘটে যাওয়ার পর শাস্তি বিধান করাটা জরুরি হলেও কোন অবস্থায় যথেষ্ট নয়। বরং এমন কাণ্ড যেন একেবারেই না ঘটে তেমন ব্যবস্থা করতেই আমাদের সচেষ্ট থাকতে হবে। তদারকি কর্তৃপক্ষগুলোর প্রধান লক্ষ্য সেটাই হওয়া উচিৎ। এজন্য তাদের দরকারি লোকবল ও সম্পদ বরাদ্দ দেয়ার পাশাপাশি তাদের সেই কারিগরি দক্ষতাটুকু যেন থাকে সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। নাগরিক সমাজের দিক থেকে এই দাবিগুলোও বারবার আসা দরকার।

তবে আমাদের একই সঙ্গে অবশ্যই বাস্তববাদিও হতে হবে। ঢাকা-সহ সারাদেশে অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে ভবন বিপদজ্জনকতার পাশাপাশি আরও যেসব ঝুঁকি তৈরি হয়েছে সেগুলো তো অল্প কয়েকদিনে হয়নি। একটা দীর্ঘ সময় ধরে ধীরে দানা বেধে আজকে এই বিপদ এতো বড় আকার ধারণ করেছে। কাজেই রাতারাতি এই সমস্যা সমাধান করে ফেলা যাবে এমন আশা করাটা একেবারেই উচিৎ হবে না।

আবাসিক ভবনের অনুমোদন নিয়ে সেখানে রেস্টুরেন্ট কিংবা অফিস নির্মাণ করাটা অবশ্যি অনৈতিক। তবে এখন রাতারাতি এমন সব ভবনে তালা দিলে অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির সঙ্কট আরও ঘনিভূত হবে। রাজধানী শহরে যতো অনিরাপদ রেস্তোরা আছে সব তড়িঘড়ি বন্ধ করে দিলে এ খাতে যারা কাজ করছেন বিশেষ করে যারা অনানুষ্ঠানিক শ্রমিক তারা ভিষণ বিপাকে পড়বেন। তাদের দিকটিও আমাদের মাথায় রাখা চাই। মনে করে দেখুন করোনার সময় যদি আমরা আরএমজি ফ্যাক্টরিগুলো পুরোপুরি বন্ধ করে রাখতাম তাহলে শুধু গার্মেন্ট শ্রমিকরা নন, বরং পুরো অর্থনীতিই চাপে পড়ে যেত। সে সময় আমরা নিজস্ব একটি পথ (একটি মধ্যম পন্থা বলা যায়) অনুসরণ করে এক ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করে ফ্যাক্টরিগুলো চালু রেখেছিলাম।

ঢাকা কিংবা অন্য শহরগুলোতেও যথাযথ নির্দেশনা অনুসরণ না করে যে ভবনগুলো নানা কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে সেগুলোর ক্ষেত্রেও এমন মধ্যম পন্থা খুঁজে বের করাটিই বাস্তবমুখি সিদ্ধান্ত হবে কিনা তা ভেবে দেখা যেতে পারে। পত্রিকা মারফত গতকালই জানলাম যে রাজউকের আওতাধীন এলাকার ৫ লক্ষ ভবনের মধ্যে ৩ লক্ষেরই নাকি অনুমোদন নেই। যেগুলোর অনুমোদন আছে তার মধ্যেও শতকরা ৯০ ভাগ শেষ পর্যন্ত অনুমোদিত নকশা মেনে নির্মিত হয়নি। সমস্যার ব্যাপকতা যখন এই পর্যায়ে, তখন তড়িঘড়ি করে কিংবা কেবল শাস্তি দিয়ে তার সমাধান হবে না। মাননীয় হাইকোর্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুদক্ষ সচিবের নেতৃত্বে বিভিন্ন সংস্থা ও বুয়েটের শিক্ষক প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে যে দুটো কমিটি গঠন করে দিয়েছে তা খুবই বাস্তবানুগ হয়েছে। পাশাপাশি নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা এ দুটো কমিটিকে সব ধরনের তথ্য ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করাটিই যুক্তিযুক্ত হবে।

ঠাণ্ডা মাথায় জননিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সঙ্কট নিরসনের একটি রোডম্যাপ আমাদের দাঁড় করাতে হবে। ঝুঁকিতে থাকা ভবনের একটি ডাটাবেজ তৈরি করে নাগরিক সমাজ-সহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনকে সাথে নিয়ে এই রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। তার পর এক ধাক্কায় সব সমস্যা মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা না করে পর্যায়ক্রমে সমাধানের দিকে এগুতে হবে। আর যেমনটি আগেই বলেছি- পুরো প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে নগরবাসীর জীবনের নিরাপত্তাকে।

পাশাপাশি অন্য যে বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখতে হবে সেটি হলো ভবনের নকশা অনুমোদন থেকে শুরু করে পরবর্তিকালে এই নকশা অনুসরণ করে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে কি-না তা দেখার জন্য আমাদের যে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়াগুলো আছে সেগুলোকে কিভাবে আরেকটু সময়োপযোগি করা যায়। অনিয়ম-দূর্নীতি নিশ্চয় হয়েছে। অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে ঢালাওভাবে দূর্নীতি-অনিয়মের আওয়াজ তুলে বসে থাকলে তো চলবে না। সমস্যাগুলো কোথায় হচ্ছে, সমাধান করার ক্ষেত্রে কি ধরনের দক্ষতা বৃদ্ধি বা ক্যাপাসিটি বিল্ডিং দরকার- তা নিয়ে ভাবতে হবে। সরকার তো ভাববেই। নাগরিক সমাজকেও এই দায়িত্ব নিতে হবে। সংলাপের দরজা খোলা রাখতে হবে। গণসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগ তারাও নিতে পারেন।

আমি জানি বিশ্ব মানের স্থপতিরা এদেশে আছেন। সরকারি কর্তৃপক্ষগুলো দরকারবোধে এই স্থপতিদের উপদেষ্টা হিসেবে সাথে নিয়ে এগুতে পারে। সামষ্টিক অর্থনৈতিক চাহিদা ও লক্ষ্যগুলোর বিষয়ে সংবেদনশীল থাকতে এই প্রক্রিয়ায় অর্থনীতিবিদ এবং উন্নয়ন বিশেষজ্ঞদেরও সাথে নেয়া যায়। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিদেরও এ বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে। তাদের তরফ থেকেও নিশ্চয় উদার সহায়তা পাওয়া যাবে।

আলোচিত সঙ্কটগুলো যেমন ব্যাপক ও গভীর এগুলো থেকে স্থায়িভাবে উত্তরণের জন্য তেমনি দীর্ঘ সময় দরকার হবে। এই বাস্তবতা আমাদের মানতেই হবে। তবে স্বল্পমেয়াদে কিছু উদ্ভাবনী উদ্যোগ নিয়ে পরিস্থিতি কিছুটা হলেও উন্নত করা সম্ভব।

যেমন: বেইলি রোডের ওই ভবনের দায়িত্বে যারা আছেন তাদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বার বার সতর্ক করেছেন বলে শুনেছি। একটু আগেই বলেছি রাজউক এলাকার ৬০ শতাংশ ভবনের নকশার কোন অনুমোদনই নেই। এসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো এমন ঝুঁকিতে থাকা ভবনগুলোর তালিকা প্রকাশ করতে পারে জনপরিসরে। প্রতিটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের কার্যালয়ে এই তালিকা প্রকাশ্যে টাঙিয়ে রাখা যায়। অনলাইনেও প্রকাশ করা যেতে পারে। সচেতন নাগরিকেরা তখন ঐ ভবন মালিক/ব্যবস্থাপকদের ওপর সামাজিক চাপ তৈরি করতে পারেন। প্রথিতযশা প্রতিষ্ঠানগুলো তখন ওই রকম ভবন অফিস বা রেস্টুরেন্ট বা অন্য কোন কাজে ভাড়া নিতে দ্বিতীয়বার ভাববে। আমার মনে হয় অল্প সময়ের মধ্যেই যে মন্ত্রণলায় ও সংস্থাগুলো ভবন নির্মাণ ও নিরাপত্তার বিষয়গুলো তদারকির দায়িত্বে আছে তাদের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে বিভিন্ন মাত্রার ঝুঁকিতে থাকা ভবনগুলো চিহ্নিত করতে পারবে।

বাণিজ্যিক ব্যাংকের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তরফ থেকে রেটিংয়ের ব্যবস্থা চালু করে আমরা দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মানসিকতায় ইতিবাচক পরিবর্তন হতে দেখেছিলাম। রাজউক কিংবা সিটি কর্পোরেশনগুলো একই স্টাইলে বহুতল ভবনগুলোর জন্য নিরাপত্তার একটি রেটিং চালু করার কথা ভাবতে পারে।

একটি ভবন কমপ্লায়েন্ট হতে সেখানে কি ধরনের ব্যবস্থা থাকা দরকার সে বিষয়ে গণসচেতনতা বাড়াতে হবে। তখন সাধারণ ভোক্তা/গ্রাহকদের দিক থেকেও এক ধরনের তদারকির পথ সুগম হবে। ভোক্তা/গ্রাহকদের জন্য একটি হটলাইন চালু করা যেতে পারে। কোন ভবনের কমপ্লায়েন্স নিয়ে তাদের দুর্ভাবনাগুলো এই হটলাইনের মাধ্যমে তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে অবগত করতে পারেন। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকে গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে এমন একটি হটলাইন চালু করে বেশ সুফল পেয়েছি। এখনও পাচ্ছি। সরকারি কর্তৃপক্ষগুলোর সঙ্গে বিশেষজ্ঞ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের আলাপ-আলোচনা বাড়ানো গেলে এমন বা এর চেয়েও বেশি কার্যকর ও উদ্ভাবনী উদ্যোগ নিশ্চয় বেরিয়ে আসবে।

একই সঙ্গে সঙ্কট সমাধানে দীর্ঘমেয়াদি যে পদক্ষেপগুলো নেয়া দরকার সেগুলোর কাজও দ্রুততম সময়ের মধ্যে শুরু করা দরকার। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) তাদের সংবাদ সম্মেলনে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব রেখেছে। যেমন ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) অনুসারে ‘বিল্ডিং রেগুলেটরি অথরিটি (বিআরএ)’ প্রতিষ্ঠা করা, সাংঘর্ষিকতা ও অস্পষ্টতা পরিহার করে অগ্নিপ্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন ২০০৩, বিএনবিসি, এবং ইমারত নির্মাণ বিধিমালার মধ্যে সামঞ্জস্য নিশ্চিত করা, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স-এর ‘সিভিল ডিফেন্স’ অংশকে শক্তিশালী করা ইত্যাদি। নগারবাসীর জানমালের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে নগর পরিকল্পনা ও পরিচালনার ধারায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সকল অংশীজন মিলে সর্বাত্মক উদ্যোগ নিলে সুফল নিশ্চয়ই আসবে। বিপর্যয় মোকবিলায় বাংলাদেশের সাফল্যের গল্পের কমতি নেই। আসুন সবাই মিলে ফের সঙ্কটকে সুযোগে পরিণত করি।

* লেখক: খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর